Loading proofofbrain-blog...

শূন্য পৃথিবী

পৃথিবী আবার শূন্য হয় কিভাবে? এপ্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। চারিদিকে এত মানুষ, ঘর হতে বাইরে বেরুলেই দেখা মিলে হাজারো মানুষ, যে যার মতো ব্যস্ত জীবন নিয়ে বা তাদের জীবনই তাদেরকে ব্যস্ত হতে বাধ্য করেছে। আসলে ব্যস্ত থাকায় তেমন কোনো দোষ নেই, এই ব্যস্ততার মাঝে যেন কারো মনের কথা কারো একটু দাঁড়িয়ে শুনার সময়টুকু কারো কারো হয়ে উঠে না। কোনো এক ছুটির দিনে চায়ের কাপের আড্ডায় মনের সব দুয়ার খুলে, সব আবর্জনা মনের সব দুঃখ-ক্লেশ বাইরে বের করার মতো ভা তা শুনার মতো এখন কাউকে খুজে পাওয়া খুবই দুর্লভ।

1652605934572.jpg

এই পৃথিবীর মাঝে রয়েছে অসংখ্য পৃথিবী আর সেপৃথিবীগুলো হলো একেবারে নিজস্ব পৃথিবী, একজনের পৃথিবী অন্য জনের থেকে একদম আলাদা। একজনের মনের জগৎ অন্য জন্য জনের থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। আর একজনের পৃথিবী তখনই শূন্য হয়, যখন সে তা মনের ভেতরে বইতে থাকা ঝড় অন্য কারো সাথে বলার মানুষ পায় না। তখনই মনের জগৎ বা তার একান্ত নিজস্ব পৃথিবী শূন্য পৃথিবী নামে খ্যাত হয়।

ছেলেটা খুবই ছোট ছিল, যখন তার বাবা-মার মধ্যে বিচ্ছেদের সৃষ্টি হয়, তার বয়স তখন বছর দুই-এক হবে। বিচ্ছেদের রেশ ধরে, তার মামারা জোর করেই তার মার সাথে তাকেও বাপের বাড়িতে নিয়ে আসে। তখন সে কিছু বুঝত না। কোনো রকমে এক পা, দু-পা ফেলে হাটতে পারত। বিচ্ছেদের পর বাপের বাড়ি চলে আসার কারনে, তার মা ছেলেটার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুচিন্তার মধ্যে পড়ে যায়, তার বড় মামা তার মাকে ভরসা দেয় যে থাকা খাওয়া, লেখাপড়ার দায়িত্ব তারা নিবে, এনিয়ে যেন তার মা আর কোনো চিন্তা না করে। স্বামীর ঘর ছেড়ে এসেছে এ শোক তার মা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারতেছিলো না। মাঝে মাঝে অঝোর ধারায় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে শুরু করে তার মা।

আর তার মামারা তাকে সান্তনা দেয়। এভাবে যেতে থাকে মাসের পর মাস বছরের পর বছর। আর তার শোকের তীব্রতাও দিনকে দিন প্রশমিত হতে থাকে। এবার তার চিন্তার জগৎ শুধু তার ছেলে, ছেলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে চায়। ছেলে নাম চঞ্চল, মানে ও কাজে বহুত মিল। যত বড় হতে থাকে তার চঞ্চলতাও বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। কখনো ভরদুপুরে গ্রামের ছেলেদের সাথে কাঠ ফাটা রোদে গ্রামীণ সব খেলায় মেতে উঠে, কখনো চলে যায় যেখানে মন চায় সেখানে আর ঘরে ফিরে আসে সারা শরীরে কাদা মাখামাখি করে। এসব দেখে তার মা খুবই বিরক্ত, তাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত কিন্তু ছেলেকে যে এনিয়ে বকাঝকা করবে তা করার আর সাহস হয়ে উঠে না।

কারন হঠাৎ যদি বলে বসে বাবা নাই, দেখে আজ তুমি আমায় বকতেছো। এজন্য তার মা তাকে বকাঝকা করা না, শুধু রাতে যখন ঘুমাতে যায়, তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর সময় ছেলেকে বুঝাতে থাকে। বুঝানোর সময় হুম, হুম করলেও, রাত পেরিয়ে যখন দিন হয়, সে তার আপন রূপ চঞ্চলতায় ফিরে আসে। এভাবে কেটে যায়, ছয়-সাত বছর। হঠাৎ একদিন তার মাকে দেখতে আসে বিয়ের জন্য, যদিও তার মার বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা নেই, তবে তার মামারাই তাকে বের করে দেয়ার জন্য এসব করছে। যাইহোক বাধ্য হয়েই পুনরায় বিয়েতে বসতেই হলো ছেলেকে না বুঝিয়ে। অবশেষে ছেলে বুঝতে পারছে যে তার মা চলে যাবে আরেকজনের ঘরে, তাকে একা রেখে। তাকে থাকতে হবে তার মামার বাড়িতেই। সে তো তার মাকে যেতে দিবে না, মায়ের শাড়ির আচল টেনে মাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগল।

যেতেই হবে কিছু করার নেই। অবশেষে সে একা হয়ে পরল, খুবই একা। আগে বাইরে কিছু হলে মায়ের কোলে শুয়ে সব গলগল করে বলতে থাকত আর এখন তার কথা শুনার কেউ নেই। এভাবে কেটে যায় একবছরের মতো। হঠাৎ একদিন তার মা তাকে দেখতে আসে, এবং তাকে তার মার সাথে করে নিয়ে যায়। আহা! তার খুশি কে দেখে! সে তার মাকে আবার ফিরে পায়। ভালোই কাটতে থাকে তার মা-ছেলের সময়। হঠাৎ একদিন তার মা তার সাথে বিছানায় ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ মাঝ রাতে তার, ঘুম ভেঙে গেলে সে দেখে তার মা বিছানায় নেই। সাথে সাথে সে খুজতে গিয়ে মেঝেতে চোখ পড়তেই দেখে তার মা, মেঝেতে পড়ে আছে। সে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে। তার চিৎকার চেচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে মানুষজন এসে তার মাকে ধরে বিছানায় উঠায়।

সে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে, " মা তোমার কি হয়েছে? তোমার শরীর খারাপ? ডাক্তার ডেকে আনবো? " তার মা উত্তর দিলো, " না, বাবা আমি ভালো আছি তুই ঘুমা। " সারারাত সে তার মায়ের পাশে বসে তার মায়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হঠাৎ সেও ঘুমিয়ে যায়। সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর দেখে তার মায়ের নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এদেখে সে তার মাকে ডাকা শুরু করে দেয়, মা, মা বলে কিন্তু তার মা আর কোনো জবাব দেয় না। অবশেষে হাসপাতালে নিলে গেলে জানা যায়, তা মা ব্রেন স্ট্রোক করেছে। এরপর থেকে সব শূন্যতা তাকে ঘিরে ধরে। তার মনের কথা বলার মতো আর আপন কাউকে সে পায় না। মন খারাপ হলে একা রুমে গিয়ে তার বিছানার তোশকের নিচ থেকে তার ডায়েরি বের করে তাতে লিখতে থাকে অথবা তার মায়ের ছবির দিকে চেয়ে চেয়ে একাই কথা বলতে থাকে।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
19 Comments